ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ | ২ মাঘ ১৪৩১

দাম্পত্য জীবন : প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়, পরিপূরকতা

Daily Inqilab মো. মেহেদী হাসান খান সিয়াম

১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৩ এএম

(পূর্বে প্রকাশিতের পর)
প্রত্যেক ক্রিয়ার বিপরীত প্রতিক্রিয়ার মতো মনে হচ্ছে, আগে পুরুষরা যেভাবে নারীদেরকে ব্যবহার করেছে, এখন নারীরা সেই সুপ্ত জেটটাকে উদ্ভাসিত করছে। স্বামীর পায়ের নিচে বেহেশত হিসেবে গুজব ছড়ানো পুরুষটা সারাদিন অফিসের কাজ করে হাঁপিয়ে বাড়ি ফিরে নিজের খাবার নিজে নিয়ে খায়, আর স্ত্রী ফেসবুকের রিলস দেখে। ভিন্ন মত হলেই স্ত্রী স্বামীর উপর চড়াও হচ্ছে। নারী যেমন জাতগত আহ্লাদপ্রবণ, তেমনি পুরুষ জাতগত স্বাধীনচেতা; সে স্বীকৃতিটা অনেক বোনদের থেকে আসছে না। ইসলাম স্বামীর অধিকারের প্রতি যতটুকু মাত্রা দিয়েছে, ততটুকু পালন করার নমুনাও দেখা যাচ্ছে না অনেক বোনদের মধ্যে। নিজের মাথায় যা আসছে, অনেক বোন স্বৈরাচারীর মতো সেটাই বাস্তবায়ন করতে চড়াও হয়, যা একজন স্বাধীনচেতা পুরুষের জন্য কষ্টদায়ক হয়। নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পর তার কাছে মনে হয়, কোনো কাজকর্মে স্বামীকে জিজ্ঞেস করার কোনো প্রয়োজন নাই। শত সংগ্রামের মাধ্যমে একটা ছেলেকে একটি পরিবার প্রতিষ্ঠিত করে কিন্তু সে পরিবারে অবদান রাখতে গেলে কতিপয় দ্বীনি স্ত্রীদের থেকে বাঁধা আসে। উল্লেখ করার বিষয়, পুরুষতান্ত্রিকতার চরম পর্যায়েও পরিবারগুলো টিকে গেলেও, এখনকার সুপ্ত হিজাবী ফেমিনিজম এক্টিভিটির যুগে সেটা আর টিকছে না।

সর্বোপরি সমস্যাগুলোর কারণ যদি হিজাবী ফেমিনিজমকে দেই তাহলে এটি উসকে দেওয়ার পেছনে অনধিকারী পুরুষতান্ত্রিকতা দায়ী। ইসলাম পুরুষকে পরিবারের প্রধান করেছে নারীকে ভালোবাসা ও দয়া দিয়ে একটি প্রশান্ত পরিবার গঠনের জন্য কিন্তু পুরুষরা সেটা করতে অনেকক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়েছে।

আল্লাহ কোরআনুল কারীমে বলেন, ‹আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এর মধ্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে সে কওমের জন্য, যারা চিন্তা করে।› (সূরা রুম: ২১)

মোটাদাগে বললে, বাহ্যিকভাবে ইসলামী পরিবার দেখা গেলেও, পরিবারগুলোর চিন্তার কেন্দ্রবিন্দুতে ইসলামী মূল্যবোধ নাই। যার ফলে, ইসলামের মতো একটি সর্বোৎকৃষ্ঠ সভ্যতার অধিকারী হয়েও আমাদের পরিবারগুলোতে ভারসাম্য নাই। প্রশান্তিময় পারিবারিক জীবনের জন্য, আমাদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক চিন্তার মূল রোডম্যাপ হিসেবে ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

আমাদের মনে রাখতে হবে, পারিবারিক সম্পর্কগুলো সরলরেখার মতো না যে, কিছু নিয়ম বেঁধে দিলাম আর সবকিছু ঐরকম চলবে। মানুষ আবেগ-অনুভূতি, প্রেম-প্রীতি, ভালোবাসা, রূহ, দুঃখ, রাগ ইত্যাদি গুণাবলি সমন্বিত প্রাণী। তাই মানুষের সরলরৈখিকভাবে চলা সম্ভব নয়। এজন্য একে অপরকে ছাড় দিয়ে চলতে হবে। পরিবার মানে ফরমালিটি বা হিসাবনিকাশ নয়! প্রফেশনাল লাইফে অনেক খ্যাতি-সম্মান থাকতে পারে, তবে তা যেন ঐ ডেস্কেই থাকে। পরিবারে যেন সেগুলোর ইগো না ছড়ায়। উভয়দিক থেকেই উচিত পরস্পরের পরিপূরক হিসেবে একে অপরের প্রতি সেক্রিফাইজ করে, আমানতদারিতার সাথে একে-অপরের সাথে আচরণ করা। ‹পরিপূরক ভালো না থাকলে, নিজেও ভালো থাকবো না› এমন চিন্তা নিয়ে আমাদের চলতে হবে। পুরুষদেরকে উচিত নারীদের আবেগ-আহ্লাদের সঙ্গ দেওয়া আর নারীদের উচিত ক্লান্ত বদনে অফিস করে ফিরে আসা স্বামীর প্রতি যতœশীল আচরণ করা।

ইসলামে আত্মকেন্দ্রিকতার জায়গা নাই। আত্মকেন্দ্রিক হওয়ার অনুমতি থাকলে, আল্লাহ মানুষকে এ পৃথিবীতে ‹ইমারাতুল আরদ’ বা পৃথিবী শাসনের আমানত দিয়ে পাঠাতেন না। আত্মচিন্তা থেকে বের হয়ে এসে, নিজে ভালো থাকার জন্য, পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের ভালো রাখার বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দিতে হবে। তাওয়াক্কুল, তাসাউফ, সতীত্ব, অন্তরের প্রশস্ততা, সহমর্মিতা, মায়া-মমতা, পরমতসহিষ্ণুতা, কৃতজ্ঞতা, আমানতদারিতা, ধৈর্য, ক্ষমা ও শোকরের মতো আখলাকের মৌলিক গুণাবলীগুলো অর্জনে স্বামী-স্ত্রী একে-অপরকে উৎসাহিত করতে হবে।

‹প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, পরিপূরক› এই স্লোগানকে সামনে রেখে চলতে পারলেই আমরা স্থিতিশীল একটা পরিবার উপহার পেতে পারি। প্রত্যেকের দাম্পত্য জীবন হয়ে উঠুক প্রেম-প্রীতি, প্রশান্তি, দয়া, আবেগ-অনুভূতি, জান্নাত প্রত্যাশার খেরোখাতা। শেষ করতে চাই প্রিয় নবি (সা.) এর দুইখানা হাদিস পেশ করে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‹তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই সর্বোত্তম যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম, আর আমি তোমাদের মধ্যে আমার স্ত্রীদের নিকট সর্বোত্তম ব্যক্তি›। (ইবনে মাজাহ- ১৯৭৭, তিরমিযী- ৩৮৯৫)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করে, রমজান মাসের রোযা রাখে, লজ্জাস্থানের হেফাজত করে এবং স্বামীর অনুগত থাকে; তাকে বলা হবে- তুমি যে দরজা দিয়ে চাও জান্নাতে প্রবেশ কর।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান- ৪১৬৩; মুসনাদে আহমাদ- ১৬৬১) (সমাপ্ত)

লেখক: শিক্ষার্থী, বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সন্তোষ, টাঙ্গাইল।


বিভাগ : ধর্ম দর্শন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

রজব মাসের আমল
আল-কুরআন তাজকেরায়ে মীলাদ নামায়ে আম্বিয়া (আ:)
মিরাজুন্নবী (সা:)-এর ইতিহাস
২০২৪ সালে পবিত্র হজ ও ওমরাহ করেছেন ১ কোটি ৮৫ লাখ মানুষ
প্রশ্ন: প্রিয় জিনিসের প্রতিক্ষার স্বরূপ ?
আরও

আরও পড়ুন

বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪

বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪

মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫

মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫

সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই

সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই

ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের

ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের

গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি

গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি

রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের

রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের

শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা

শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা

বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা

বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা

দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম

দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম

বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের

বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের

ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?

ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?

আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু

আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু

বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ

বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ

রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী

রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী

ধূমপানকে না বলুন

ধূমপানকে না বলুন

জালিমের পরিণতি ভালো হয় না

জালিমের পরিণতি ভালো হয় না

অখণ্ড ভারতের নীলনকশা এবং মুখোশপরা গণশত্রুদের দাস্যবৃত্তি

অখণ্ড ভারতের নীলনকশা এবং মুখোশপরা গণশত্রুদের দাস্যবৃত্তি

মাজারে হামলা ও উগ্রপন্থা কাম্য নয়

মাজারে হামলা ও উগ্রপন্থা কাম্য নয়

১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত

১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত